বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ অপরাহ্ন

জো বাইডেনের অভিষেক : শপথ অনুষ্ঠানে কী কী ঘটবে

জো বাইডেনের অভিষেক : শপথ অনুষ্ঠানে কী কী ঘটবে

স্বদেশ ডেস্ক:

অভিষেকের দিনের আগ পর্যন্ত নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউজে যেতে পারেন না। এই অভিষেক অনুষ্ঠান একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি। এবারের অভিষেকে নব নির্বাচিত জো বাইডেন এবং কমালা হ্যারিস বুধবার নিজ নিজ পদের জন্য শপথ গ্রহণ করবেন।

অভিষেক কী?
অভিষেক হলো সেই আনুষ্ঠানিকতা যেখান থেকে নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন আইনসভা ক্যাপিটল ভবনের প্রাঙ্গণে।

ওই অনুষ্ঠানের একমাত্র অবশ্য পালনীয় অনুষঙ্গ হচ্ছে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ। যেখানে তিনি বলেন, ‘আমি একনিষ্ঠভাবে শপথ গ্রহণ করছি যে, আমি বিশ্বস্ততার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের দায়িত্ব সম্পাদন করব এবং আমি আমার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও প্রতিপালন করবো।’

এই শব্দগুলো উচ্চারণের সাথে সাথে বাইডেন আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্টে পরিণত হবেন এবং তার অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হবে। অবশ্য এখানেই আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে না, এরপরে থাকবে উদযাপন।

কমালা হ্যারিসও শপথ নেয়ার সাথে সাথে ভাইস প্রেসিডেন্টে পরিণত হবেন। প্রথা অনুযায়ী তিনি শপথ নেবেন প্রেসিডেন্টের ঠিক আগে।

বাইডেনের অভিষেক কখন?
আইন অনুযায়ী, অভিষেকের দিনটি হলো ২০ জানুয়ারি। সাধারণত উদ্বোধনী বক্তব্যটি দেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টা)। আর তার ঠিক আধ ঘণ্টা পর মধ্যাহ্নের সময় জো বাইডেন এবং কমালা হ্যারিস শপথ নেবেন।

তারপর হোয়াইট হাউজে চলে যাবেন জো বাইডেন। যেটা হতে যাচ্ছে তার আগামী চার বছরের কর্মস্থল ও বাসস্থান।

মার্কিন কর্মকর্তারা কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছেন। নিরাপত্তা পরিকল্পনার নেতৃত্বে আছে সিক্রেট সার্ভিস, যাদের সাথে যোগ হয়েছে ১৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য। আর অতিরিক্ত হিসেবে হাজার হাজার পুলিশ অফিসার থাকবে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে আগে থেকেই জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে, যা বলবৎ থাকবে অভিষেক শেষ হওয়া পর্যন্ত।

সিক্রেট সার্ভিসের পক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থার নেতৃত্বে রয়েছেন এজেন্ট ম্যাট মিলার। তিনি সাংবাদিকদের গত শুক্রবার বলেছেন, প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে এই অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা করা হয়েছে।

ট্রাম্প কি অভিষেকে থাকবেন?
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের সময় উপস্থিত থাকবেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রে একটা প্রথায় পরিণত হয়েছিল। যদিও এই প্রথা কখনো কখনো অপ্রস্তুত ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করে।

কিন্তু এই বছর সেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে যোগ হচ্ছে ভিন্ন মাত্রা। প্রথমবারের মতো কোনো অভিষেক অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হাজির হচ্ছেন না।

৮ জানুয়ারিতে একটি টুইট করে সেটি জানিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, ’যারা যারা জানতে চেয়েছেন তাদের সবার লক্ষে বলছি, ২০ জানুয়ারির অভিষেকে আমি যাচ্ছি না’।

দিনটিতে তিনি ফ্লোরিডায় তার ঠিকানা মার-আ-লাগোর উদ্দেশে যাত্রা করবেন বলে এখন পর্যন্ত ঠিক হয়ে আছে।

ট্রাম্পের কিছু সমর্থক বলছেন, বাইডেন যে সময়ে শপথ নেবেন, ঠিক একই সময়ে তারা একটা ভার্চুয়াল দ্বিতীয় অভিষেকের পরিকল্পনা করছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য।

ফেসবুকে ৬৮ হাজারের বেশি মানুষ বলেছেন, তারা ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন দেখাতে ওই অনলাইন ইভেন্টে যোগ দেবেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে ছিলেন তার পূর্বসূরী বারাক ওবামা। ট্রাম্প যখন শপথ নিয়েছিলেন, তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন তার স্বামী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মাত্র তিনজন প্রেসিডেন্ট তাদের উত্তরাধিকারীর অভিষেকে উপস্থিত না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, জন অ্যাডামস, জন কুইন্সি এবং অ্যান্ড্রু জনসন। গত শতাব্দীতে অবশ্য একজন প্রেসিডেন্টও ওই আচরণের পুনরাবৃত্তি করেননি।

অবশ্য ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স জানিয়েছেন, তিনি আজকের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

কোভিড-১৯ এই বছরের অভিষেককে কীভাবে বদলে দেবে?
সাধারণ পরিস্থিতিতে অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লাখ লাখ মানুষ ওয়াশিংটন ডিসিতে এসে জড়ো হন। অভিষেকের সময় ক্যাপিটল হিলের সামনের ন্যাশনাল মল মানুষে গিজগিজ করতে থাকে।

২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রথমবারের অভিষেকে কুড়ি লাখের মতো মানুষ এসেছিল। কিন্তু এ বছরের উদযাপনে অনেক কাটছাঁট করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাইডেন টিম। তারা আমেরিকানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রাজধানীতে না আসার জন্য।

ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডবের পর একই আহ্বান জানিয়েছে ডিসি কর্তৃপক্ষও। অভিষেক এলাকায় যে দর্শক গ্যালারি তৈরি করা হয়েছিল, তাও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

তবে প্রথা অনুযায়ী এবারো ক্যাপিটল হিলের সামনে দাঁড়িয়ে মলের দিকে মুখ করে শপথ নেবেন জো বাইডেন ও কমালা হ্যারিস। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যানের থেকেই এই প্রথা চলে আসছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী, এবার মঞ্চে যে দুই শ’ মানুষ বসবেন, তাদের আসন সাজানো হবে সামাজিক দূরত্ব মেনে।

মঞ্চে যারা থাকবেন তাদের প্রত্যেকের মুখই থাকবে মাস্কে ঢাকা। অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে সবারই কোভিড-১৯ আছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখার কথা।

অবশ্য গত জুনে বাইডেন বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি শপথ গ্রহণের মুহূর্তটিতে মাস্ক পরে থাকবেন না।

অতীতে আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিতে দুই লাখ পর্যন্ত টিকেট ছাড়া হতো। এবার মহামারীর কারণে টিকিট পাওয়া যাবে মোটে এক হাজারের মতো।

অতীতের মতো এবারো শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের রীতি অনুযায়ী সেনাবাহিনী পরিদর্শন করবেন কমাণ্ডার-ইন-চিফ। তবে পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ থেকে হোয়াইট হাউজ পর্যন্ত সেই প্রথাগত প্যারেডের বদলে এবার হবে পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ভার্চুয়াল প্যারেড।

পরে সস্ত্রীক বাইডেন এবং স্বামীসহ মিজ হ্যারিসকে হোয়াইটে হাউজে নিয়ে যাবে সেনাবাহিনী, যাদের সাথে থাকবে ব্যান্ড দলও।

কোন কোন তারকা থাকবেন?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন প্রেসিডেন্টরা অভিষেকের দিনে দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় তারকাদের হাজির করেছেন। মহামারী সত্ত্বেও এ বছরও ব্যতিক্রম হবে না।

জো বাইডেনের সক্রিয় সমর্থক লেডি গাগা উপস্থিত থাকবেন এবারের অভিষেকে। তিনি জাতীয় সঙ্গীত গাইবেন। পরে মঞ্চে গান গাইবেন জেনিফার লোপেজ।

বাইডেনের শপথ গ্রহণের পর অভিনেতা টম হ্যাংকসের উপস্থাপনায় ৯০ মিনিটের একটি টেলিভিশন শো হবে, সরাসরি অনুষ্ঠানের বদলে টিভি শোয়ের কারণ হলো করোনা মহামারী।

এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন জন বন জোভি, ডেমি লোভ্যাটো এবং জাসটিন টিম্বারলেক। অনুষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ টিভি নেটওয়ার্ক এবং স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলোতে সম্প্রচারিত হবে।
শুধু রক্ষণশীল নেটওয়ার্ক ফক্স চ্যানেলে এটা দেখানো হবে না কারণ প্রচারণার সময় চ্যানেলটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছিলো।
সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877